‘প্রস্তাবিত অটোমোবাইল শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা শিল্পনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক’

প্রস্তাবিত অটোমোবাইল শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা-২০২০ বিদ্যমান শিল্পনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা)।

শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে অটোমোবাইল শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা-২০২০’র বিভিন্ন দুর্বলতা তুলে ধরে করা ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করে সংগঠনটি।

এই সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি প্রস্তাবিত নীতিমালার বিভিন্ন দিক নিয়ে সমালোচনা করে। সংগঠনটির পক্ষে থেকে বলা হয়, সরকারের নেয়া উদ্যোগে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ মোটরকার বা বাংলাদেশ ‘ন্যাশনাল কার’ গর্বের হলেও যে কোন শিল্প স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণের আগে সংশ্লিষ্ট খাতে বিদ্যমান শিল্পগুলোর অবস্থান, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা এবং বাস্তবতাকে আমলে নেয়া জরুরি। এক্ষেত্রে এসব দিক গুরুত্বসহ বিবেচনা করা হয়নি।

বিদ্যমান শিল্পনীতি যথাযথ অনুরসণ না করেই করা অটোমোবাইল শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা-২০২০টি চূড়ান্ত করার আগে আন্তর্জাতিক মানের ও স্বাধীন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এটি আবারও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নেয়ার আহ্বান জানানো হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে।

প্রস্তাবিত নীতিমালায় ভোক্তা/গ্রাহকদের খরচেই একটি চমৎকার গতিশীল রপ্তানিমুখী গাড়ি শিল্প উন্নয়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্রস্তাবের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি এবং এমনকি সিবিইউ ইউনিট আমদানিকারকদের মধ্যে প্রতিযোগিতাকে নি:শেষ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বলে দাবি সংগঠনটির।

সংগঠনটির দাবি, প্রস্তাবিত নীতিমালায় দেশীয় গাড়ি (Homemade cars) নির্মাণের নামে একটি বড় রকমের স্ক্রু ড্রাইভিং শিল্প প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে ক্রেতাদের উচ্চমূল্যে নিম্নমানের গাড়ি কিনতে বাধ্য করা হবে; যেসব গাড়ি পরিবেশবান্ধব নয়।

দেশের সীমিত বাজারকে সামনে রেখে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা প্রয়োজন বলে মনে করে সংগঠনটি। বাংলাদেশে ভারত বা চীনের মত গাড়ির অভ্যন্তরীণ বাজার তেমন বড় নয়, যাতে এখানে যথেষ্ট সংখ্যক দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তা শিল্প স্থাপন করতে পারবেন। গাড়ির অভ্যন্তরীণ বাজার ন্যূনতম ১ লাখ ইউনিট হলে নতুন গাড়ির শিল্প প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব বলে প্রস্তাবিত নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ২০ হাজার ইউনিট গাড়ি বিক্রি হয়। এমন প্রেক্ষাপটে বিশ্বের কোন বড় ও বিখ্যাত কোম্পানির জন্য এখানে সত্যিকারের অটোমোবাইল শিল্প স্থাপন কতটুকু টেকসই হবে তা ভেবে দেখার বিষয় বলে মনে করে বারভিডা।

উচ্চশুল্ক ও করের কারণে দেশে আমদানি করা গাড়ি থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি রাজস্ব পেয়েছে সরকার। যার বেশিরভাগই এসেছে রিকন্ডিশন্ড থেকে। দেশের আমদানিকারকরা গাড়ি ভেদে সর্বোচ্চ ৮২৬ শতাংশ ও সর্বনিম্ন ১২৭ শতাংশ শুল্ক দিয়ে থাকেন; এত উচ্চশুল্ক আর কোন দেশে নেই। প্রস্তাবিত নীতিমালায় নতুন গাড়ির শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে আহরিত রাজস্বের আকার কেমন হবে তা আরও ভালোভাবে বিবেচনায় রাখা জরুরি।

প্রস্তাবিত নীতিমালায় আমদানি পর্যায়ে আরোপিত সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি (এসডি) রেটগুলো স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি।

নীতিমালাটি আরও সম্মুখমুখী হওয়া প্রয়োজন, যা পরিবর্তিত পরিস্থিতি ও চাহিদার সঙ্গে খাপ খাইয়ে তৈরি করা হবে এবং যার লক্ষ্য হবে দেশের নাগরিক ও ভোক্তাদের সর্বোচ্চ স্বার্থ রক্ষা করে কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ নিশ্চিত করে একটি প্রতিযোগিতামূলক ও টেকসই গাড়ি শিল্প প্রতিষ্ঠা করা।

আপনি আরও পড়তে পারেন